প্রথম
অধ্যায়
এই পেজে যে বিষয়গুলি
আলোচনা করা হবে :
১. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
২. রোবটিক্স
৩. ক্রায়োসার্জারি
v
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হলো কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি শাখা, যেখানে মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তা শক্তিকে কম্পিউটার দ্বারা অনুকৃত করার চেষ্টা করা হয়ে থাকে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন হয়ে উঠেছে একটি একাডেমিক শিক্ষার ক্ষেত্র যেখানে পড়ানো হয় কিভাবে কম্পিউটার এবং সফটওয়্যার তৈরি করতে হয় যা বুদ্ধিমত্তা প্রদর্শন করবে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা :
জিপিএস প্রযু্ক্তির সুবিধা :
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্বারা মোবাইল ফোন অথবা গাড়িতে থাকা জিপিএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে সহজেই এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে আমাদের রাস্তার পাশের সাইনবোর্ডে আর রাস্তা চেনার প্রয়োজন পড়বে না। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্বারা গাড়ি স্বয়ংক্রিয়ভাবে গন্তব্যে পৌঁছে যাবে।
খনিজ সম্পদ, পেট্রোল ও জ্বালানি অনুসন্ধান :
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় এমন সব কাজ করা যাবে যা মানুষ দ্বারা করা সম্ভব হবে না। গভীর সমুদ্রের তলদেশে খনিজ পদার্থ, পেট্রোল ও জ্বালানির খোঁজ করা এবং খনি খননের কাজ খুবই কঠিন হয়ে থাকে। তাছাড়াও সমুদ্রের তলদেশে পানির প্রচণ্ড চাপ থাকে। এ জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যন্ত্রের সহায়তায় সহজেই কাজগুলো করা যাবে।
খেলার প্রশিক্ষণ :
আজকাল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্বারা ক্রিকেট, ফুলবল, বেসবল, দাবা ইত্যাদি খেলার ছবি তোলা হচ্ছে। এটি খেলার প্রশিক্ষণও দিতে পারছে।
চিকিৎসা ক্ষেত্র :
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্বারা চিকিৎসা ক্ষেত্রে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, অপারেশন, এক্সরে, রেডিও সার্জারি ইত্যাদি কাজ সফলতার সাথে করা যাচ্ছে।
অন্যান্য সুবিধা :
সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যন্ত্র নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাবে। এগুলো ক্লান্ত হবে না। যেখানে মানুষ কিছুক্ষণ কাজ করার পর ক্লান্ত হয় সেখানেও এই যন্ত্র শতভাগ সফলতার সাথে কাজ করতে পারবে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অসুবিধা :
বেকারত্ব বৃদ্ধি :
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাবে। ফ্যাক্টরি, ব্যাংক ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যন্ত্র ব্যবহৃত হলে হাজার হাজার লোক বেকার হয়ে পড়বে।
খরচ বৃদ্ধি :
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যন্ত্রে খরচ বৃদ্ধি পেতে পারে। ব্যাংক, এটিএম বুথ, ফ্যাক্টরি, হাসপাতাল ইত্যাদিতে এই যন্ত্রপাতি স্থাপনের জন্য প্রচুর খরচ পড়বে। এছাড়াও রক্ষণাবেক্ষণ খরচও অনেক বেশি হবে। আবার প্রোগ্রাম সফ্টওয়্যার বারবার পরিবর্তন করারও প্রয়োজন পড়তে পারে।
সৃজনশীলতা হ্রাস :
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ফলে মানুষের সৃজনশীলতা হ্রাস পাবে। কারণ মানুষ তখন নিজে চিন্তা-ভাবনা না করে যন্ত্রনির্ভর হয়ে পড়বে।
বিপজ্জনক অস্ত্র নির্মাণ :
মনে করা হয় যখন এই যন্ত্রে নিজস্ব অনুভূতি প্রবেশ করানো হবে তখন নিজে নিজে বিপজ্জনক অস্ত্র নির্মাণ করতে সক্ষম হবে। তখন সেই অস্ত্র দিয়ে মানবজাতিকে শাসন ও শোষণ করতে পারে। এছাড়াও তা হতে পারে মানবজাতির ধ্বংসেরও কারণ।
অভিজ্ঞতা অর্জন হ্রাস :
সাধারণত মানুষ কোনো কাজ করার মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জন করে ও পরবর্তীতে আরও উন্নতভাবে কাজটি করতে পারে। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যন্ত্র তা পারছে না। এটি তার ভেতরের সফটওয়্যারে যা প্রবেশ করানো আছে সেই অনুযায়ী কাজ করতে পারে।
সঠিক ও ভুল বোঝে না :
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যন্ত্রগুলো ভিতরে থাকা প্রোগ্রাম অনুযায়ী কাজ করে। কাজটি সঠিক নাকি ভুল হল সে সম্পর্কে কোনো ধারণা করতে পারে না।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা ও অসুবিধা বিবেচনায় বিজ্ঞানের উচিত এই ব্যবস্থাকে মানবকল্যাণে কীভাবে ব্যবহার করা যায় সে সম্পর্কে বিস্তর গবেষণা করা। এছাড়াও এই ব্যবস্থার উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল না হয়ে সুষমভাবে ব্যবহার করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া।
v
রোবটিক্স
রোবটিক্স:টেকনোলজির যে শাখায় রোবটের নকশা, গঠন ও কাজ সম্পর্কে আলোচনা করা হয় সেই শাখাকে রোবটিকস বলে।
রোবটের(Robot)
প্রকারভেদ :
রোবট (Robot) সাধারনত ২ ধরনের-
১.অটোনোমাস বা স্বয়ংক্রিয় রোবট(Robot): ঘরবাড়ি বা আবর্জনা পরিষ্কারসহ বাড়িঘরের কাজ বা মহাশূন্যের কাজে ব্যবহৃত রোবট হলো অটোনোমাস বা স্বয়ংক্রিয় রোবট।
২.সেমি অটোনোমাস বা আধা-স্বয়ংক্রিয় রোবট(Robot): যে সমস্ত রোবটকে পরিচালনার জন্য মানুষের কিছু নিয়ন্ত্রন ও পরিচালনা প্রয়োজন হয়, সেগুলো সেমি অটোনোমাস বা আধা-স্বয়ংক্রিয় রোবট।
সোফিয়া রোবট (Robot) কে বিশ্বের প্রথম
সামাজিক রোবট
বলা হয়,
যা তৈরি
করে হংকং
ভিত্তিক একটি
প্রতিষ্ঠান যার
নাম হ্যানসন
।
রোবট(Robot) তৈরিতে যে সকল বৈশিষ্ট দেওয়ার চেষ্টা করা হয়-
১.দৃষ্টিশক্তি বা ভিজুয়্যাল পারসেপশন(Visual Perception)
২.সংস্পর্শ বা স্পর্শ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য সক্ষমতা(Tactile Capabilities)
৩.নিয়ন্ত্রন ও ম্যানিপুলেশনের ক্ষেত্রে দক্ষতা বা নিপুনতা(Dexterity)
৪.যে কোন স্থানে দৈহিকভাবে নড়াচড়ার ক্ষমতা বা লোকোমোশন(Locomotion)
৫.কোন গন্তব্যে যাবার পথকে যথাযথভাবে খুঁজে বের করার বুদ্ধিমত্তা বা নেভিগেশন(Navigation)
রোবোটের(Robot) বিভিন্ন উপাদান বা অংশ
মুভেবল বডি (Movable Body): স্থানান্তরিত হবার জন্য একটি রোবোটে চাকা, যান্ত্রিক সংযোগসম্পন্ন পা কিংবা অন্য কোনো ধরনের নড়াচড়া করাতে সক্ষম যন্ত্রপাতি।
অ্যাকচুয়েট (Actuator): একচুয়েটর হলো এক ধরনের মোটর যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে রোবটের হাত-পা নড়াচড়া করানোর কাজে ব্যবহৃত হয়।। এককথায় এটিকে মানুষের মতো রোবোটের হাত-পায়ের পেশি হিসেবেও অভিহিত করা যায়।
বৈদ্যুতিক উৎস বা পাওয়ার সিস্টেম (Power system):
অ্যাকচুয়েটরকে কার্যকর করতে হলে রোবোটের প্রয়োজন বৈদ্যুতিক সংযোগ এবং এর জন্য ইলেকট্রিক রোবোটসমূহ সাধারণত লেড এসিড ব্যাটারি বা এক্সটেনসন কর্ড ব্যবহার করে। এ ধরনের ব্যাটারি রিচার্জেবল হয়ে থাকে এবং রোবোটকে(Robot) কাজ করার পর বা কাজ করার পূর্বে ব্যাটারি রিচার্জ করা প্রয়োজন হয়। তবে হাইড্রেলিক রোবোটের ক্ষেত্রে রিচার্জের পরিবর্তে এর হাইড্রোলিক ফ্লুয়িডকে প্রেসারাইজ করার জন্য পাম্প এর প্রয়োজন হয় এবং নিউম্যাটিক রোবোটের রিচার্জের জন্য এয়ার কমপ্রেশার প্রয়োজন হয়।
ইলেকট্রিক সার্কিট (Electric circuit): বৈদ্যুতিক রোবোটের মোটরসমূহে বৈদ্যুতিক সংযোগ প্রদান করতে ইলেকট্রিক সার্কিট ব্যবহার করা হয়। একই সাথে হাইড্রোলিক ও নিউমেটিক সিস্টেমের রোবোটকে নিয়ন্ত্রণকারী সলেনয়েড বা ভালসমূহকেও ইলেকট্রিক সার্কিটটের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক সংযোগ প্রদান করে।
মস্তিষ্ক বা কম্পিউটার (Brain Or Computer): রোবোটের মধ্যে স্থাপিত প্রোগ্রামকৃত মস্তিষ্ক বা কম্পিউটার একটি রোবটের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। যদি কোনো কারণে রোবোটের (Robot) আচরণ পরিবর্তন প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে এর ভেতরে থাকা কম্পিউটার রিপ্রোগ্রাম করা হয়।
অনুভূতি (Sensing):
অনুভূতি রোবোটের (Robot) একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। মানুষের যেমন যে কোনো উদ্দীপনায় সাড়া দেয়ার অনুভূতি থাকে তেমন অনুভূতি রোবোটের মধ্যেও তৈরি করা যায়, বিভিন্ন উদ্দীপনার প্রতি সাড়া দিতে সক্ষম। যেমন, রোবোটের হাত বা পা যে কোনো জায়গা স্পর্শ করলে সে জায়গা সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য নেয়ার ক্ষমতা রোবোটের থাকতে পারে। মানুষের চোখের ন্যায় রোবোটে স্থাপিত ক্যামেরা দিয়ে সামনে বা পেছনের দৃশ্য গ্রহণ করা সম্ভব। যার ফলে বিভিন্ন কাজের প্রয়োজনে রোবোটকে ৩৬০ ডিগ্রি এঙ্গেলে ঘোরানো যেতে পারে।
ম্যানিপুলেশন বা পরিবর্তন করা (Manipulation):
রোবট তার আশেপাশের বস্তুগুলোর অবস্থান পরিবর্তন বা বস্তুকে ধরতে বা উঠাতে সক্ষম হয় তার হাত-পা এর মাধ্যমে, রোবটের হাত-পা এর সাহায্যে তার আশেপাশের বস্তুগুলোর অবস্থান পরিবর্তন বা বস্তুটি পরিবর্তন করার পদ্ধতিকে ম্যানিপুলেশন বলে। একই সাথে রোবোট (Robot) তার পায়ের সাহায্যে সামনে বা পেছনে, ডানে বা বামে চলাচল করতে পারবে।
রোবোটিক্স বা রোবটের ব্যবহার
১. ম্যানুফ্যাকচারিং-এ: কম্পিউটার এইডেড ম্যানুফ্যাকচারিং (ক্যাম)-এ রোবোটিক্স ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে যানবাহন ও গাড়ির কারখানায় রোবোট ব্যবহৃত হয়।
২. বিপজ্জনক কাজে: যে সকল কাজ স্বাভাবিকভাবে মানুষের জন্য বিপজ্জনক যেমন- বিস্ফোরক নিষ্ক্রীয়করণ, ডুবে যাওয়া জাহাজের অনুসন্ধান, খনির অভ্যন্তরের কাজ ইত্যাদির ক্ষেত্রে রোবোটিক ডিভাইস বহুলভাবে ব্যবহৃত হয় হয়ে থাকে।
৩. ভারী শিল্প কারখানায়: কারখানায় কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত রোবোটের সাহায্যে নানা রকম বিপজ্জনক ও পরিশ্রমসাধ্য কাজ যেমন- ওয়েল্ডিং, ঢালাই, ভারী মাল ওঠানো বা নামানো, যন্ত্রাংশ সংযোজন ইত্যাদি করা হয়।
৪. পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পরীক্ষার কাজে: রোবোট (Robot) অতিক্ষুদ্র মাইক্রোসার্কিটের উপাদান পুনঙ্খানুপুরঙ্খরূপে অবিশ্বাস্যভাবে পরীক্ষা করতে পারে, যা করা মানুষের পক্ষে কঠিন এবং অসম্ভব।
৫. মেইল ডেলিভারির কাজে: বৃহৎ প্রতিষ্ঠানে বিল্ডিংসমূহ জুড়ে বিভিন্ন মেইল স্টেশনে মেইল ডেলিভারির কাজে বিশেষ ধরনের রোবোট (Robot) ব্যবহার করা হয়। আল্ট্রা ভায়োলেট পেইন্ট দিয়ে মার্ক করা রুটগুলোকে এসব রোবোট অনুসরণ করে।
৬. ঝুঁকিপূর্ণ কাজে: পারমাণবিক কেন্দ্রে ক্ষতিকর তেজষ্ক্রিয়ায় যেসব কর্মী কাজ করেন তাদের ঝুঁকি অনেক। এসব ঝুঁকিপূর্ণ কাজে মানুষের বদলে রোবোট (Robot) কাজ করতে পারে।
৭. নিরাপত্তার কাজে: উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থাপনায় নিরাপত্তার জন্য রোবোট (Robot) ব্যবহৃত হয়। মাইক্রোওয়েভ ভিশনের মাধ্যমে যেকোনো অধাতব দেয়ালের অপর পাশে কি আছে তা দেখতে পারে, অন্ধকারে কয়েকশ ফুট দূর থেকেও আগন্তুককে দেখতে পায় নিরাপত্তার জন্য তৈরি করা রোবোট। তাই এগুলো গুরুত্বপূর্ণ অনেক ভবন পাহারায় ব্যবহার করা হয়।
৮. পুলিশের সাহায্যকারী হিসেবে: বিশ্বের বহু দেশে পুলিশ বিপজ্জনক পরিস্থিতি মোকাবেলায় রোবোটকে ব্যবহার করে। যেমন-জিম্মি মুক্ত করা, গোলাগুলি ইত্যাদিও মতো পরিস্থিতি মোকাবেলায় রোবোটকে ব্যবহার করে। যেমন- জিম্মি মুক্ত করা, গোলাগুলি ইত্যাদির মতো পরিস্থিতিতে গুলি করতে, দরজা খুলতে, সামনে গিয়ে পরিস্থিতি অবলোকন করতে বা ক্যামেরার সাহায্যে জানালায় নজর রাখতে ঘটনাস্থলে রোবোটকে ব্যবহার করা হয়।
৯. সামরিক ক্ষেত্রে: সামরিক ক্ষেত্রেও রোবোটের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য। বোমা নিষ্ক্রিয় করা, ভূমি মাইন শনাক্ত করা, সামরিক নানা সরঞ্জমাদি বহন এবং অন্যান্য মিলিটারি অপারেশনে রোবোট ব্যবহার করা হয়।
১০. ঘরোয়া কাজে: কিছু কিছুরোবোট হাঁটতে পারে এবং মানুষের সাথে কথা বলতে পারে। প্রাত্যহিক অনেক কাজকর্ম; যেমন- কফি তৈরি করা, ঘর পরিষ্কার করা ইত্যাদি কাজে রোবোটকে ভৃত্যের মতো ব্যবহার করা যায়।
১১. চিকিৎসায়: চিকিৎসাক্ষেত্রে জটিল সব অপারেশনে সার্জনদের নানা ধরনের কাজে রোবোট (Robot) সহায়তা করে।
১২. মহাকাশ গবেষণায়: মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে রোবোটের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। মানুষের পরিবর্তে মহাকাশ অভিযান এখন বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সংবলিত রোবোট ব্যবহৃত হচ্ছে। সম্প্রতি মঙ্গলগ্রহে যুক্তরাষ্ট্রের নাসা কর্তৃক ‘কিউরিসিটি’ নামের একটি রোবোট (Robot) পাঠানো হয়েছে যেটি মঙ্গলের পরিবেশ, প্রকৃতি ইত্যাদি হতে তথ্য নিয়ে সেগুলোকে বিশ্লেষণ করে পৃথিবীতে পাঠাচ্ছে।
রোবোটের সাধারণ বৈশিষ্ট্য বা সুবিধাসমূহ
১. রোবোট নির্দিষ্ট প্রোগ্রাম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বিধায় যে কোনো কাজ দ্রুত ও নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম।
২. রোবোট বিরতিহীন ও ক্লান্তিহীনভাবে দিনরাত একটানা কাজ করতে পারে।
৩. রোবোট যে কোনো মানবিক অনুভূতি তথা রাগ, ঘৃণা, ভয়, বিরক্তি প্রভৃতি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত বিধায় তার কাজে মানবিক অনুভূতির কোনো বাঁধা সৃষ্টি হয় না।
৪. রোবোট পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি অনুভব করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে প্রদত্ত সক্ষমতা অনুসারে তার কাজের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।
৫. যে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্ষতিকর অসহনীয় পরিবেশে স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারে।
৬.রোবট দ্বারা তৈরি পন্যের গুনগতমান খুব ভালো ও সূক্ষ্ণতাও বেশি।
৭. রোবটের কাজ করার গতি বেশি তাই আউটপুট বেশি পাওয়া যায়।
৮. বিপজ্জনক পরিবেশে রোবটের মাধ্যমে কাজ করা নিরাপদ।
রোবোট ব্যবহারের অসুবিধাসমূহ
১.রোবট সফটওয়্যার নিয়ন্ত্রিত তাই স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারে না।
২.মানবকর্মীর মতো রোবোট কোনো আকস্মিক পরিবর্তিত পরিবেশ পরিস্থিতিকে মানিয়ে নিয়ে কাজ করতে পারে না যদি না তার প্রোগ্রাম পরিবর্তন করা হয়।
৩.রোবোট ব্যবহারের ফলে ধীরে ধীরে মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ছে। এতে বেকারত্ব বাড়ছে, মানুষও ধীরে ধীরে তার কর্ম দক্ষতা হারিয়ে ফেলছে।
৪.রোবোট ব্যবহার এখনও অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং এর ব্যবস্থাপনা এখনও সহজসাধ্য হয়নি।
৫.রোবট পরিচালনার জন্য দক্ষ জনবলের প্রয়োজন হয়।
৬.ভূল সংশোধন বা ভূল থেকে শিক্ষা নিতে পারে না।
v ক্রায়োসার্জারি
ক্রায়োসার্জারি হচ্ছে প্রচন্ড ঠান্ডা বা বরফ-শীতল প্রয়োগ করে শরীরে অস্বাভাবিক কোষ বা টিস্যু ধ্বংস করার পদ্ধতি। সাধারণত ত্বকের ছোট ছোট টিউমার, তিল, আঁচিল, মেছতাও ত্বকের চিকিৎসায় ক্রায়োসার্জারি করা হয়।
ক্রায়োসার্জারি দ্বারা অভ্যন্তরীণ কিছু রোগ যেমন যকৃৎ ক্যানসার, প্রস্টেট ক্যানসার, ফুসফুস ক্যানসার, মুখের ক্যানসার, গ্রীবাদেশীয় গোলযোগ, পাইলস ক্যানসার, স্তন ক্যানসার ইত্যাদি চিকিৎসা করা হয়। মানবদেহের কোষগুলোর অবস্থা
planten faccilitis, এবং fibroma ক্রায়োসার্জারির মাধ্যমে করা হয়।
ব্যবহার পদ্ধতি
8 তরল নাইট্রোজেনকে স্প্রে করার জন্য ক্রয়োগান ব্যবহার করা হয়।
8 বহিরাগত টিউমারের ক্যানসার কোষে সরাসরি তরল নাইট্রোজেন একটি সুচ, তুলা বা স্প্রে করা যন্ত্র দিয়ে প্রয়োগ করা হয়।
8 অভ্যন্তরীণ টিউমারের ক্ষেত্রে, ক্রয়োপ্রোব
(Cryoprobe) নামক একটি ফাঁপা উপকরণ দিয়ে তরল নাইট্রোজেন বা নিষ্ক্রিয় গ্যাস টিউমারের সংস্পর্শে সঞ্চালন করা হয়। এ ক্ষেত্রে ডাক্তররা আলট্রাসাউন্ডবা এমআরআই (MRI) ব্যবহার করেন।
8 ক্রায়োপ্রোব টিউমারকে নিয়ন্ত্রণ করতে এবং জমাটবদ্ধ কোষ নিরীক্ষণ করতে যাতে চারপাশের সূক্ষ্ম টিস্যুগুলোর ক্ষতি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা হয়।
ক্রায়োসার্জারিতে ব্যবহৃত গ্যাস ও তাপমাত্রা :
১.ডাই মিথাইল ইথার-প্রোপেন (-41০C)
২.তরল কার্বন-ডাই অক্সাইড (-79০C)
৩.তরল নাইট্রাস অক্সাইড (-89০C)
৪.তরল অক্সিজেন (-182.9০C)
৫.হিলিয়াম (-270০C)
৬.তরল নাইট্রোজেন (-195.79০C)
৭.আর্গন (-196০C)
ক্রায়োসার্জারিতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি :
আলট্রাসাউন্ড, MRI বা কম্পিউটেড টমোগ্রাফি, ক্রায়োপ্রোব, স্প্রে-ডিভাইস এবং কটন বাট।
ক্রায়োসার্জারির (Cryosurgery) ব্যবহার :
১. ত্বকের ছোট টিউমার,তিল,আঁচিল,মেছতা এবং ত্বকের ক্যান্সারসমূহের জন্য ক্রায়োসার্জিক্যাল চিকিৎসা দেয়া হয়।
২. বেশ কিছু অভ্যন্তরীণ শারীরিক ব্যাধি যেমন- লিভার ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার, ওরাল ক্যান্সার, সার্ভিক্যাল ব্যাধিসমূহের চিকিৎসায় ক্রায়োসার্জারি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
৩. মানবদেহের কোষকলার কোমল অবস্থা যেমন- প্ল্যান্টার ফ্যাসিলিটিজ এবং ফিবরোমাকে ক্রায়োসার্জারির মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায়।
৪.মস্তিস্কের টিউমার,চোখের ছানি,প্রসূতি সমস্যায় এ পদ্ধতি কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হয়।
ক্রায়োসার্জারি(Cryosurgery) চিকিৎসা পদ্ধতি :
ক্রায়োসার্জারি(Cryosurgery) চিকিৎসায় প্রথমেই সিমুলেটেড সফটওয়্যার দ্বারা অক্রান্ত কোষগুলোর (যেমন-আঁচিল,ছোট টিউমার) অবস্থান ও সীমানা নির্ধারন করা হয়। এরপর ক্রায়োপ্রোবের সুচের প্রান্ত দিয়ে আক্রান্ত টিস্যু বা টিউমারের কোষকে বরফ শীতল তাপমাত্রায় জমাটবদ্ধ করার জন্য তরল নাইট্রোজেন, আর্গন বা অন্যান্য ক্রায়োজনিক এজেন্ট পৃথক পৃথকভাবে ঐ স্থলে প্রবেশ করানো হয়। এগুলোর কোনো কোনটি 41০C তাপমাত্রার উদ্ভব ঘটায়; যার ফলে আক্রান্ত কোষ বা টিস্যুর পানি জমাটবদ্ধ হয়ে সেটিকে একটি বরফ খন্ডে পরিণত করে।
এ সময় আক্রান্ত কোষ বা টিস্যুতে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবার কারণে উক্ত কোষ বা টিস্যুটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। অতঃপর পুনরায় ঐ স্থানে ক্রায়োপ্রোবের সাহায্যে হিলিয়াম গ্যাস প্রবেশ করিয়ে এই তাপমাত্রাকে 20০C থেকে 30০C পর্যন্ত ওঠানো হয়। এতে আক্রান্ত কোষ বা টিস্যুটির বরফ গলে গিয়ে এটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। আক্রান্ত স্থানে সুনির্দিষ্ট কােষ বা টিস্যুকে নিখুঁতভাবে চিহ্নিত করার জন্য আল্ট্রা সাউন্ড বা এমআারআই যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। ফলে এর আশেপাশে থাকা সুস্থ কোষগুলোর কোনো ক্ষতি হয় না।
ক্রায়োসার্জারির সুবিধা:
১. ক্রায়োসার্জারি চিকিৎসা পদ্ধতিতে প্রচলিত শল্য চিকিৎসার মতো অতটা কাটাছেঁড়া করার প্রয়োজন হয় না।
২. এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে।
৩. ক্যান্সারের চিকিৎসায় অন্য সব পদ্ধতির চেয়ে ক্রাইয়োসার্জারি অনেক বেশি সুবিধাজনক। প্রকৃত সার্জারির চেয়ে এটি কম আক্রমণকারী; চামড়ার ভেতর দিয়ে ক্রায়োপ্রোব ঢুকানোর জন্য অতি ক্ষুদ্র ছেদনের প্রয়োজন পড়ে।
৪. সার্জারির ক্ষেত্রে ব্যথা, রক্তপাত এবং অন্যান্য জটিলতাসমূহকে ক্রায়োসার্জারিতে একেবারেই কমিয়ে আনা হয়।
৫. অন্যান্য চিকিৎসার চেয়ে এটি কম ব্যয়বহুল এবং সুস্থ হতেও খুব কম সময় নেয়।
৬. হাসপাতালে খুবই স্বল্প সময় অবস্থান করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে হাসপাতালে থাকতেই হয় না।
৭. অনেক সময় লোকাল অ্যানেসথেসিয়ার মাধ্যমেই ক্রায়োসার্জারি সম্পন্ন করা যায়।
৮. চিকিৎসকগণ শরীরের সীমিত এলাকায় ক্রায়োসার্জিক্যাল চিকিৎসা দেন, ফলে তারা নিকটবর্তী স্বাস্থ্যবান কোষকলাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন।
৯. এ চিকিৎসাটি নিরাপদে বার বার করা যায় এবং সার্জারি, কেমোথেরাপি, হরমোন থেরাপি ও রেডিয়েশনের মতো স্ট্যান্ডার্ড চিকিৎসার পাশাপাশি করা সম্ভব।
১০. যেসব রোগীরা তাদের বয়স এবং অন্যান্য শারীরিক কারণে স্বাভাবিক সার্জারির ধকল নিতে অক্ষম তাদের জন্য ক্রায়োসার্জারি হলো আদর্শ।
ক্রায়োসার্জারির অসুবিধা:
১. ক্রায়োসার্জারির প্রধানতম অসুবিধা হলো এর দীর্ঘমেয়াদি কার্যকারিতার অনিশ্চয়তা।
২. ইমেজিং পীক্ষাসমূহের মাধ্যমে চিকিৎসকগণ টিউমারসমূহ দেখে নিয়ে তার ক্ষেত্রে ক্রায়োসার্জারিকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারলেও এটি আণুবীক্ষণিক ক্যান্সার ছড়ানোকে প্রতিহত করতে পারে না।
৩.যকৃত, পিত্ত ও প্রধান রক্তনালীতে রক্তক্ষরণ ঘটায়।
৪. ত্বকের ক্যান্সারের চিকিৎসায় ক্রায়োসার্জারির ফলে ত্বক ফুলে যায় এবং স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
৫.রোগ ছড়িয়ে পড়েনি এমন ক্যান্সার চিকিৎসায় এ পদ্ধকি কার্যকর, অন্যথায় তেমন কার্যকর নয়।
ক্রায়োসার্জারি কাদের জন্য উপযোগী নয়:
১.যাদের ঠান্ডায় সংবেদনশীলতা বেশি।
২.যাদের ক্ষত দেরিতে শুকায় বা ডায়াবেটিক আছে।
0 Comments
Thank you for your comment.