ফুসফুসের ক্যান্সার বলতে আমরা কি বুঝিঃ
ফুসফুসের ক্যান্সার ( Lung cancer) বা ফুসফুস ক্যান্সার একটি রোগ যাতে ফুসফুসের টিস্যুগুলিতে অনিয়ন্ত্রিত কোষবৃদ্ধি ঘটে। এই বৃদ্ধির ফলে মেটাস্ট্যাসিস, প্রতিবেশী টিস্যু আক্রমণ এবং ফুসফুসের বাইরে সংক্রমণ ঘটতে পারে। প্রাথমিক ফুসুফুসের ক্যান্সারের অধিকাংশই ফুসফুসের কার্সিনোমা, যা ফুসফুসের এপিথেলিয়াল কোষগুলিতে ধরা পড়ে। ফুসফুসের ক্যান্সার পুরুষদের ক্যান্সার-জনিত মৃত্যুর প্রধান কারণ এবং মহিলাদের এরূপ মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ। ফুসফুসের ক্যান্সারের কারণে প্রতি বছর বিশ্বে ১৩ লক্ষ লোক মারা যান। ফুসফুসের ক্যান্সারের সাধারণ লক্ষণ শ্বাস নিতে সমস্যা, রক্তসহ কাশি এবং ওজন হ্রাস।
ফুসফুস ক্যান্সারের ৮৫% এর জন্য দায়ী দীর্ঘমেয়াদি তামাক সেবন। বাকি ১০-১৫% যারা কখনো ধূমপান করেন নি,তারা আক্রান্ত হন।জেনেটিক ফ্যাক্টর,বায়ু দূষণ ইত্যাদি ফুসফুস ক্যান্সারের অন্যতম প্রভাবক। বুকের এক্স-রে পরীক্ষা এবং কম্পিউটার টমোগ্রাফির মাধ্যমে ফুসফুসের ক্যান্সার ধরা যেতে পারে। পরবর্তীতে একটি বায়োপসির মাধ্যমে এটি নিশ্চিত করা সম্ভব। সার্জারি, কেমোথেরাপি এবং রেডিওথেরাপির মাধ্যমে এর চিকিৎসা করা যায়। ৫ বছর চিকিৎসার পর রোগীর বেঁচে যাওয়ার হার ১৪%
ফুসফুসে ক্যান্সারের লক্ষনঃ
১. কাশিঃ দুই-তৃতীয়াংশ রোগীর ক্ষেত্রেই লাং ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে কাশি দেখা যায়। এক্ষেত্রে শুকনো কাশি অথবা ঘন ঘন কাশি হতে পারে, কাশির সাথে অতিমাত্রায় কফ যেতে পারে অথবা রাতের দিকে কাশি প্রচণ্ড বেড়ে যেতে পারে।
২. কাশির সাথে রক্ত যাওয়াঃ এটিও ফুসফুস ক্যান্সারের অন্যতম লক্ষণ এবং ধূমপানকারী পুরুষ রোগীদের ক্ষেত্রে লক্ষণটি বেশী দেখা যায়। এক্ষেত্রে কফের সাথে অথবা থুতুর বা লালার সাথে রক্ত যায় এবং দেখা যায় ফুসফুস এর কোন না কোন জায়গায় বারবার ইনফেকশন হয়।
৩. বুক ব্যথাঃ প্রায় ৩০% ফুসফুস ক্যান্সারের রোগীর ক্ষেত্রে এই লক্ষণটি দেখা যায়। টিউমার ফুসফুস ঝিল্লীর আশপাশে হলে মাঝে মাঝে হালকা বুক ব্যথা হয়ে থাকে কিন্তু টিউমারটি যদি ফুসফুস ঝিল্লী ভেদ করে তাহলে অনবরত বুকে ব্যথা থাকে।
৪. জ্বরঃ ক্যান্সারের প্রদাহের কারণে জ্বর হয়ে থাকে এবং শরীরের তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি এর নিচে থাকে। এক্ষেত্রে কোন অ্যান্টিবায়োটিক ও কাজ করে না এবং বার বার জ্বর আসতে থাকে।
৫. বুক ব্যথা এবং শ্বাস-কষ্টঃ ক্যান্সারের কারণে ফুসফুসের শ্বাস প্রশ্বাস গ্রহন প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হয়।
৬. আঙুল ফুলে যাওয়াঃ এক্ষেত্রে আঙুল ফুলে যায় এবং ব্যথা হয় বিশেষ করে আঙুলের গোঁড়ার দিক এবং নখের চারপাশ। এই লক্ষণ দেখা মাত্রই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে যাতে ক্যান্সারের বিস্তার রোধ করা যায়।
৭.বাতঃ শরীরের জোড়া বা গাঁট যেমন হাঁটু,কনুই,কব্জি ইত্যাদিতে ব্যথা হতে পারে। এমনকি ব্যথার কারণে হাত নড়াচড়া করতে বা হাঁটতেও প্রচণ্ড অসুবিধা হতে পারে।
ফুসফুসের ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়ঃ
ফুসফুস ক্যান্সার হল এক ধরনের ম্যালিগন্যান্ট টিউমার। এর অনেক ধরনের চিকিৎসা আছে তবে এক্ষেত্রে রোগীর জন্য কোন চিকিৎসাটি সবচেয়ে উপযুক্ত তা নির্বাচন করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
১. সার্জারিঃ ফুস্ফুসের টিউমার অপসারনের জন্য সার্জারি করা হয়। ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলে সার্জারির মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ টিউমার অপসারণ করা যায়। অনেক ক্ষেত্রে ক্যান্সারের মধ্য পর্যায়েও সার্জারি করা হয়। তবে ফুসফুস ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ৪০% এর ও কম রোগীকে সার্জারি করা হয়। ফুসফুস ক্যান্সারের জন্য সার্জারি হল অন্যতম প্রধান চিকিৎসা তবে সার্জারির ধরণ নির্ভর করে টিউমারের ধরণ, আকৃতি, অবস্থান এবং রোগীর শারীরিক অবস্থার উপর।
২.রেডিয়েশন থেরাপিঃ দুই ধরনের রেডিয়েশন থেরাপির মধ্যে রয়েছে ইর্যাডিয়েশন ইন ক্যাভিটি, ইর্যাডিয়েশন ইন ভিট্র। এক্সরে মেশিন, কোবাল্ট বোম, এক্সিলেরেটর প্রভৃতির সাহায্যে রেডিয়েশন থেরাপি দেওয়া হয়। রেডিয়েশন পদ্ধতির সর্বাধুনিক সংযোজন হল “ফোটন নাইফ” পদ্ধতি।
সার্জারির পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী চিকিৎসা হিসেবেও রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়। স্কোয়াস সেল কারসিনোমার ক্ষেত্রে সার্জারি করা সম্ভব হয় না সেক্ষেত্রেও রেডিওথেরাপি ব্যবহৃত হয়।
রেডিওথেরাপিকে দুইভাগে ভাগ করা যায় সিম্পল রেডিওথেরাপি এবং কম্প্রিহেন্সিভ রেডিওথেরাপি। সিম্পল রেডিওথেরাপির মধ্যে রয়েছে র্যাডিক্যাল রেডিওথেরাপি এবং প্যালিয়েটিভ রেডিওথেরাপি। কোন ধরনের থেরাপি দেওয়া হবে তা নির্ভর করে রোগীর শারীরিক অবস্থা, টিউমারের ধরণ, অবস্থান ইত্যাদির উপর। কম্প্রিহেন্সিভ রেডিওথেরাপিতে সার্জারি এবং কেমোথেরাপির সাথে রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়। একক ট্রিটমেন্টের তুলনায় এগুলোর সমন্বয় করে ট্রিটমেন্ট করা হলে কার্যকারিতা আরও বেড়ে যায়।
পরিনত পর্যায়ের ফুসফুস ক্যান্সারের চিকিৎসাঃ
পরিনত পর্যায়ের ক্যান্সার রোগীদের ক্ষেত্রে প্রাইমারি ক্যান্সার এবং মেটাস্টাসিস লিম্ফ নোড অপসারনের জন্য সার্জারির সাথে কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি প্রভৃতি দেওয়া হয়।
ফুসফুসের ক্যান্সার থেকে বাঁচার উপায়ঃ
ফুসফুসে ক্যান্সার কোন জীবাণুঘটিত রোগ নয়। বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি থাকলেও এ রোগ হতে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভের কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। যদিও প্রাথমিক অবস্থায় চিকিতসাগ্রহন শুরু করলে, মোটামুটি আরোগ্য লাভ করা সম্ভব। এই রোগটি জীবাণুঘটিত না হবার কারনে আর প্রতিষেধক আবিষ্কারেও বিজ্ঞানীরা সক্ষম হয়নি। তাই জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এই রোগের প্রতিরোধ সৃষ্টি করতে হবে। মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করে, যতটা সম্ভব প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয়ে সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে মৃত্যুহার কমিয়ে আনতে সচেষ্ট ভূমিকা পালন করতে হবে।
ফুসফুসে ক্যান্সারের জন্য অন্যতম দায় হল, ধূমপান। তাই ইদানিংকালে নারীদের মাঝেও ধূমপানের মাত্রা বৃদ্ধি পাবার কারনে তাদের মাঝেও উল্লেখযোগ্য হারে এই রোগে আক্রান্ত হবার আশংকা দেখা দিয়েছে। যদিও ধূমপায়ী ব্যাক্তিদের মাঝে এই ক্যান্সার হবার আশংকা বেশী, কিন্তু তারপরও অধূমপায়ীরা যে এই ক্যান্সার থেকে একেবারেই মুক্ত তা নয়। নগরায়নের এই বিশ্বে শিল্প কারখানা ও গাড়ি নির্গত কালো ধোঁয়াও ফুসফুসে ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ যেমন-ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম, অ্যাসবেসটস ইত্যাদি এ রোগ সৃষ্টি করতে পারে। ফুসফুসে ক্যান্সার সৃষ্টিতে অ্যাসবেসটসের প্রভাব এতো বেশি যে, সমসাময়িক কালে জাহাজশিল্পে অ্যাসবেসটসের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বর্তমান উন্নত বিশ্বে পারমাণবিক বর্জ্যও ক্যান্সারের একটি বড় কারণ হিসাবে পরিগণিত হচ্ছে। ভূপাল কিংবা চেরনোবিল গ্যাস দুর্ঘটনার পর বর্তমান সময়ে সেসব অঞ্চলের মানুষের মাঝে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। ফুসফুসের প্রদাহজনিত রোগ যেমন- যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া ভালো হওয়ার পর ফুসফুসের আক্রান্ত স্থানে ক্যান্সার দেখা দিতে পারে।
ফুসফুসের যে কোন স্থান ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে। এই রোগের উপসর্গ আর লক্ষন সবার ক্ষেত্রে একরকম নয়। সাধারণভাবে এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি কাশি, কাশির সঙ্গে কফ বা রক্ত, শ্বাসকষ্ট, আক্রান্তের দিকে বুকে ব্যথা, হালকা জ্বর, খাদ্যে অনীহা, ওজন হ্রাস ইত্যাদি লক্ষন দেখা দিতে পারে। ফুসফুসে ক্যান্সার নিরাময়যোগ্য না হলেও, প্রতিরোধযোগ্য। তাই সচেতনতা সৃষ্টি করাই এই ক্যান্সার প্রতিরোধের প্রধান উপায়। জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে ধূমপান প্রতিরোধ করা গেলে এ রোগের উদ্ভব ও প্রতিরোধ করা যাবে বহুলাংশে।
What do we mean by lung cancer?
Lung cancer or lung cancer is a disease that causes uncontrolled cell growth in the lung tissues. This increase can lead to metastasis, neighboring tissue attacks, and infections outside the lungs. Most of the early lung cancers are pulmonary carcinomas, which are found in the epithelial cells of the lungs. Lung cancer is the leading cause of cancer-related death in men and the second leading cause of death in women. Lung cancer kills 1.3 million people worldwide each year. Common symptoms of lung cancer are difficulty breathing, coughing up blood, and weight loss.
Long-term tobacco use is responsible for 75% of lung cancers. The remaining 10-15% of people who have never smoked are infected. Genetic factors, air pollution, etc. are some of the major causes of lung cancer. Lung cancer can be detected by chest X-ray examination and computer tomography. This can be confirmed later with a biopsy. It can be treated with surgery, chemotherapy, and radiotherapy. The patient survival rate after 5 years of treatment is 14%
Symptoms of lung cancer
1. Cough: In two-thirds of patients, cough is seen as an early symptom of lung cancer. There may be a dry cough or frequent coughing, excessive coughing with coughing, or severe coughing at night.
2. Bleeding with cough: This is also one of the symptoms of lung cancer and is more common in male patients who smoke. In this case, blood goes with the sputum or saliva and it is seen that there is a recurrent infection in some part of the lungs.
3. Chest pain: This symptom is seen in about 30% of lung cancer patients. Occasionally there is mild chest pain when the tumor is around the lung membrane, but if the tumor penetrates the lung membrane, there is persistent chest pain.
4. Fever: Inflammation due to cancer causes fever and body temperature is below 36 degrees. In this case, no antibiotics work and fever come again and again.
5. Chest pain and shortness of breath: Cancer interferes with the breathing process of the lungs.
. Swelling of the fingers: In this case, the fingers become swollen and there is a pain especially around the ankles and around the nails. Seek medical attention as soon as these symptoms appear to prevent the spread of cancer.
6. Rheumatism: There may be pain in the joints of the body such as knees, elbows, wrists, etc. Even pain can make it difficult to move or walk.
Ways to prevent lung cancer
Lung cancer is a type of malignant tumor. There are many types of treatment, but the most important thing is to choose the treatment that is most suitable for the patient.
1. Surgery: Surgery is performed to remove a lung tumor. If the cancer is in the early stages, partial or complete removal of the tumor can be done through surgery. In many cases, surgery is also performed in the middle stage of cancer. However, in the case of lung cancer, surgery is performed on less than 40% of patients. Surgery is one of the main treatments for lung cancer, but the type of surgery depends on the type, shape, location, and physical condition of the patient.
2. Radiation therapy: There are two types of radiation therapy, irradiation in the cavity, irradiation in vitro. Radiation therapy is given with the help of an X-ray machine, cobalt bomb, accelerator, etc. The latest addition to the radiation system is the "photon knife" method.
Radiotherapy is also given as a pre-and post-surgery treatment. Radiotherapy is also used in cases where surgery is not possible for squamous cell carcinoma.
Radiotherapy can be divided into simple radiotherapy and comprehensive radiotherapy. Simple radiotherapy includes radical radiotherapy and palliative radiotherapy. What type of therapy will be given depends on the patient's physical condition, tumor type, location, etc. Comprehensive radiotherapy involves radiotherapy with surgery and chemotherapy. The effectiveness of these treatments is further enhanced by the combination of these than by a single treatment.
Treatment of advanced-stage lung cancer
Patients with advanced-stage cancer are given chemotherapy, radiotherapy, etc. with surgery to remove primary cancer and metastasis lymph nodes.
Ways to Survive Lung Cancer
Lung cancer is not a bacterial disease. Although there are different types of treatment methods, no cure for this disease has yet been discovered. However, with early treatment, a moderate recovery is possible. Because the disease is not contagious, scientists have not been able to find a cure. Therefore, it is necessary to prevent this disease by creating public awareness. By creating awareness among the people, efforts should be made to reduce the mortality rate by achieving success in early diagnosis as much as possible.
One of the major causes of lung cancer is smoking. Therefore, due to the increase in the level of smoking among women in recent times, there is a risk of contracting this disease among them at a significant rate. Although smokers are more likely to get this cancer, non-smokers are not completely free of this cancer. In this world of urbanization, black smoke from industrial plants and cars can also cause lung cancer. Besides, various chemicals such as chromium, cadmium, asbestos, etc. can cause the disease. The effects of asbestos on lung cancer are so great that the use of asbestos in the shipbuilding industry has been banned in recent times. In today's developed world, nuclear waste is also considered a major cause of cancer. After the Bhopal or Chernobyl gas accident, the number of people suffering from cancer in those areas has increased a lot at present. Inflammatory diseases of the lungs such as tuberculosis and pneumonia can lead to cancer in the affected area of the lungs.
Cancer can develop anywhere in the lungs. The symptoms of this disease are not the same for everyone. In general, the person affected by this disease may have a cough, cough with cough or blood, shortness of breath, chest pain towards the affected person, mild fever, reluctance to eat, weight loss, etc. Although lung cancer is not curable, it is preventable. So raising awareness is the main way to prevent this cancer. If smoking can be prevented by creating public awareness, the origin and prevention of this disease can be prevented to a large extent.
grid-big
0 Comments
Thank you for your comment.