১.ন্যানো টেকনোলজি
ন্যানো টেকনোলজিঃ
উন্নত প্রযুক্তির এই যুগে আমাদের অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ডিভাইস এর প্রয়োজন হচ্ছে। ডিভাইস গুলোই এতটাই ক্ষুদ্র তা একটা পদার্থের পারমনু বা অনুর সমান; অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ডিভাইস যেগুলো পারমাণবিক ও আণবিক স্কেলের সেই সব ডিভাইস সুনিপুণ ভাবে ব্যবহার করার বিজ্ঞানকে বলা হয় ন্যানো টেকনোলজি।
গ্রিক
Nanos শব্দ থেকে এসেছে ন্যানো। Nanos শব্দের অর্থ Dwarft ; কিন্ত এটি ব্যবহার করা হচ্ছে পরিমাপের একক হিসাবে। ন্যানো টেকনোলজির জনক Richard Feynman ।
১মিটারের ১০০০ভাগের ১ ভাগকে ১ন্যানোমিটার বলে। আর এই ন্যানোমিটার স্কেলে সম্পর্কিত সমস্ত টেকনোলজিকে ন্যানো টেকনোলজি বলে।
ন্যানো টেকনোলজির প্রয়োগঃ
- মহাকাশের নানান যন্ত্রপাতি
- জ্বালানি তৈরীতে
- ঔষধ ও
কসমেটিকস তৈরীতে
- কম্পিউটার হার্ডওয়ার তৈরী
- ন্যানো রোবট তৈরী
- বস্ত্র শিল্প
- ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি
ন্যানো টেকনোলজির সুবিধা ও অসুবিধাঃ
সুবিধাঃ
- ন্যানো টেকনোলজির
প্রয়োগে উৎপাদিত
ঔষধ “স্মার্ট
ড্রাগ” ব্যবহার
করে দ্রুত আরগ্য লাভ করা যায়।
- খাদ্যজাত দ্রব্য
প্যাকেজিং এর সিলভার তৈরীর কাজে
- টেকসই, স্থায়ী
ও আকারে ছোট পণ্য তৈরী
- ন্যানো ট্রান্সজিস্টর, ন্যানো ডায়োড, প্লাজমা ডিসপ্লে ইত্যাদি
ব্যবহারের ফলে ইলেকট্রনিক শিল্পে বৈপ্লবিক
পরিবর্তন
- ন্যানো প্রযুক্তি
দ্বারা তৈরী ব্যাটারী, ফুয়েল সেল, সোলার সেল ইত্যাদির
মাধ্যেমে সৌরশক্তিকে
অধিকতর কাজে লাগানো।
অসুবিধাঃ
- অতিরিক্ত ব্যয়বহুল
- ন্যানোপার্টিকেল মানুষের
শরীরের জন্য ক্ষতিকর
বায়োমেট্রিক:
গ্রীক শব্দ “bio” যার অর্থ Life বা প্রাণ ও “metric” যার অর্থ পরিমাপ করা। বায়োমেট্রিক্স হলো বায়োলজিক্যাল(জৈবিক) ডেটা পরিমাপ এবং বিশ্লেষণ করার প্রযুক্তি। অর্থাৎ বায়োমেট্রিক্স হলো এমন একটি প্রযুক্তি যেখানে কোন ব্যক্তির শারীরবৃত্তীয়
অথবা আচরণগত বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে অদ্বিতীয়ভাবে চিহ্নিত বা সনাক্ত করা হয়।
বায়োমেট্রিক্স এর
প্রকারভেদ
দেহের গঠন ও আচরণগত বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে বায়োমেট্রিক্স পদ্ধতি বিভিন্ন
প্রকার হতে পারে। যথা–
ক. দেহের গঠন ও খ.
শারীরবৃত্তীয় বৈশিষ্ট্যের বায়োমেট্রিক্স পদ্ধতি
শারীরবৃত্তীয় (গঠনগত)
বৈশিষ্ট্যঃ
১। ফেইস (Face)
২। আইরিস এবং রেটিনা (Iris & Retina)
৩। ফিংগার প্রিন্ট (Finger Print)
৪। হ্যান্ড জিওমেট্রি ( Hand Geometry)
৫। ডি.এন.এ (DNA)
আচরণগত বৈশিষ্ট্যঃ
১। ভয়েস (Voice)
২। সিগনেচার (Signature)
৩। টাইপিং কীস্ট্রোক ( Typing Keystroke)
বায়োমেট্রিকস সিস্টেমে শনাক্তকরণে বিবেচিত বায়োলজিক্যাল ডাটাগুলোকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা :
গঠনগত বৈশিষ্ট্য—
১। ফেইস রিকগনিশন
২। আইরিস এবং রেটিনা স্ক্যান
৩। ফিংগারপ্রিন্ট
৪। হ্যান্ড জিওমিট্রি
৫। ডিএনএ
আচরণগত বৈশিষ্ট্য—
১। ভয়েস রিকগনিশন
২। সিগনেচার ভেরিফিকেশন
৩। টাইপিং কিস্ট্রোক
ফেস রিকগনিশন—
ফেস রিকগনিশন সিস্টেম হচ্ছে এক ধরনের কম্পিউটার প্রগ্রাম, যার সাহায্যে মানুষের মুখের গঠন-প্রকৃতি পরীক্ষা করে তাকে শনাক্ত করা হয়। এ পদ্ধতিতে কোনো ব্যবহারকারীর মুখের ছবিকে কম্পিউটারে সংরক্ষিত ছবির সঙ্গে দুই চোখের মধ্যবর্তী দূরত্ব, নাকের দৈর্ঘ্য এবং ব্যাস, চোয়ালের কৌণিক পরিমাণ ইত্যাদি তুলনা করার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়।
সুবিধা :
১। ফেস রিকগনিশন সিস্টেম সহজে ব্যবহারযোগ্য।
২। এই পদ্ধতিতে সঠিক ফলাফল পাওয়া যায়।
অসুবিধা :
১। ক্যামেরা ছাড়া এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায় না এবং আলোর পার্থক্যের কারণে জটিলতার সৃষ্টি হয়।
২। মেকআপ, গয়না ইত্যাদির কারণে অনেক সময় শনাক্তকরণে সমস্যা হয়।
ব্যবহার :
১। কোনো বিল্ডিং বা কক্ষের প্রবেশদ্বারে।
২। কোনো আইডি নম্বর শনাক্তকরণে।
চোখের আইরিশ এবং রেটিনা স্ক্যান :
বায়োমেট্রিকস প্রযুক্তিতে শনাক্তকরণের জন্য চোখের আইরিশকে আদর্শ অঙ্গ হিসেবে গ্রহণ করা হয়। একজন ব্যক্তির চোখের আইরিসের সঙ্গে অন্য ব্যক্তির চোখের আইরিশের প্যাটার্ন মিলবে না। আইরিশ শনাক্তকরণ পদ্ধতিতে চোখের চারপাশে বেষ্টিত রঙিন বলয় বিশ্লেষণ ও পরীক্ষা করা হয় এবং রেটিনা স্ক্যান পদ্ধতিতে চোখের পেছনের অক্ষিপটের মাপ ও রক্তের লেয়ারের পরিমাণ বিশ্লেষণ ও পরিমাপ করা হয়। উভয় পদ্ধতিতে চোখ ও মাথা স্থির করে একটি ডিভাইসের সামনে দাঁড়াতে হয়।
সুবিধা :
১। শনাক্তকরণে খুবই কম সময় লাগে।
২। শনাক্তকরণে ফলাফলের সূক্ষ্মতা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।
৩। এটি একটি উচ্চ নিরাপত্তামূলক শনাক্তকরণ ব্যবস্থা যা স্থায়ী।
অসুবিধা :
১। এই পদ্ধতি অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
২। তুলনামূলকভাবে বেশি মেমোরি প্রয়োজন।
৩। ডিভাইস ব্যবহারের সময় চশমা খোলার প্রয়োজন হয়।
ব্যবহার :
১। এই পদ্ধতির প্রয়োগে পাসপোর্টবিহীন এক দেশের সীমা অতিক্রম করে অন্য দেশে গমন করা যেতে পারে, যা বর্তমানে ইউরোপে ব্যবহৃত হচ্ছে।
২। এ ছাড়া সরকারি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, মিলিটারি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদিতেও শনাক্তকরণ কাজে ব্যবহার করা হয়।
ফিঙ্গারপ্রিন্ট—
একজনের আঙুলের ছাপ বা টিপসই অন্য কোনো মানুষের আঙুলের ছাপ বা টিপসইয়ের সঙ্গে মিল নেই। এই প্রক্রিয়ায় প্রথমেই আঙুলের ছাপ ডাটাবেইসে সংরক্ষণ করা হয় এবং পরবর্তী সময় ফিঙ্গারপ্রিন্ট রিডারের মাধ্যমে আঙুলের ছাপ ইনপুট নিয়ে ডাটাবেইসে সংরক্ষিত আঙুলের ছাপের সঙ্গে তুলনা করে কোনো ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়।
ফিঙ্গারপ্রিন্ট রিডার হচ্ছে বহুল ব্যবহৃত একটি বায়োমেট্রিক ডিভাইস, যার সাহায্যে মানুষের আঙুলের ছাপ বা টিপসই এগুলোকে ইনপুট হিসেবে গ্রহণ করে তা পূর্ব থেকে সংরক্ষিত আঙুলের ছাপ বা টিপসইয়ের সঙ্গে মিলিয়ে পরীক্ষা করা হয়।
সুবিধা :
১। খরচ তুলনামূলক কম।
২। শনাক্তকরণের জন্য সময় কম লাগে।
৩। সফলতার পরিমাণ প্রায় শতভাগ।
অসুবিধা :
১। আঙুলে কোনো ধরনের আস্তর লাগানো থাকলে শনাক্তকরণে সমস্যা হয়।
২। শিশুদের জন্য উপযুক্ত নয়।
ব্যবহার :
১। কোনো প্রগ্রাম বা ওয়েবসাইটে ইউজার নেইম এবং পাসওয়ার্ডের পরিবর্তে আঙুলের ছাপ ব্যবহার।
২। প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ।
৩। ব্যাংকিং পেমেন্ট সিস্টেমে।
৪। ডিএনএ শনাক্ত করার কাজে।
হ্যান্ড জিওমেট্রিকস :
প্রত্যেক মানুষের হাতের আকৃতি ও জ্যামিতিক গঠনেও ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। বায়োমেট্রিক ডিভাইস দ্বারা হ্যান্ড জিওমেট্রি পদ্ধতিতে মানুষের হাতের আকৃতি বা জ্যামিতিক গঠন, হাতের সাইজ ইত্যাদি নির্ণয়ের মাধ্যমে মানুষকে শনাক্ত করা হয়। এ পদ্ধতিতে হ্যান্ড জিওমেট্রি রিডার হাতের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, পুরুত্ব ইত্যাদি পরিমাপ করে ডাটাবেইসে সংরক্ষিত হ্যান্ড জিওমেট্রির সঙ্গে তুলনা করে ব্যক্তি শনাক্ত করে।
সুবিধা :
১। ব্যবহার করা সহজ।
২। সিস্টেমে অল্প মেমোরির প্রয়োজন।
অসুবিধা
১। ডিভাইসগুলোর দাম তুলনামূলক বেশি।
২। ফিঙ্গারপ্রিন্টের চেয়ে ফলাফলের সূক্ষ্মতা কম।
ব্যবহার
১। এয়ারপোর্টের আগমন-নির্গমন নিয়ন্ত্রণ।
২। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবীদের উপস্থিতি নির্ণয়ে।
৩। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবং লাইব্রেরিতে।
ডিএনএ :
ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্টিংয়ের সাহায্যে মানুষ চেনার বিষয়টি অনেক বেশি বিজ্ঞানসম্মত। কোনো মানুষের দেহকোষ থেকে ডিএনএ আহরণ করার পর তার সাহায্যেই কিছু পর্যায়ক্রমিক পদ্ধতি অনুসারে ওই মানুষের ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্ট তৈরি করা হয়। মানবদেহের রক্ত, চুল, একবার বা দুবার পরা জামাকাপড় থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করা।
সুবিধা :
১। পদ্ধতিগত কোনো ভুল না থাকলে শনাক্তকরণের সফলতার পরিমাণ প্রায় শতভাগ।
অসুবিধা :
১। ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্টিং তৈরি ও শনাক্তকরণের জন্য কিছু সময় লাগে।
২। ডিএনএ প্রফাইলিং করার সময় পদ্ধতিগত ভুল ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্টিংয়ের ভুলের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
৩। সহোদর যমজদের ক্ষেত্রে ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্টিং সম্পূর্ণ এক হয়।
৪। তুলনামূলক খরচ বেশি।
ব্যবহার :
১। অপরাধী শনাক্তকরণে।
২। পিতৃত্ব নির্ণয়ে।
৩। বিকৃত শবদেহ শনাক্তকরণে।
৪। লুপ্তপ্রায় প্রাণীদের বংশবৃদ্ধির জন্য।
৫। চিকিৎসাবিজ্ঞানে।
ভয়েস রিকগনিশন :
ভয়েস রিকগনিশন পদ্ধতিতে সব ব্যবহারকারীর কণ্ঠকে, কম্পিউটার প্রগ্রামিংয়ের সাহায্যে ইলেকট্রিক সিগন্যালে রূপান্তর করে প্রথমে ডাটাবেইসে সংরক্ষণ করতে হয় এবং একজন ব্যবহারকারীর কণ্ঠকে ডাটাবেইসে সংরক্ষিত ভয়েস ডাটা ফাইলের সঙ্গে তুলনা করে কোনো ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়।
সুবিধা :
১। সহজ ও কম খরচে বাস্তবায়নযোগ্য শনাক্তকরণ পদ্ধতি।
অসুবিধা : ১। অসুস্থতাজনিত কারণে কোনো ব্যবহারকারীর কণ্ঠ পরিবর্তন হলে সে ক্ষেত্রে অনেক সময় সঠিক ফলাফল পাওয়া যায় না।
২। সূক্ষ্মতা তুলনামূলকভাবে কম।
ব্যবহার :
১। অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এ পদ্ধতি ব্যবহার করে।
২। টেলিফোনের মাধ্যমে লেনদেনের ক্ষেত্রে ভয়েস রিকগনিশন সিস্টেম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৩। টেলিকমিউনিকেশন সিস্টমের নিরাপত্তায়।
সিগনেচার ভেরিফিকেশন :
সিগনেচার ভেরিফিকেশন পদ্ধতিতে হাতে লেখা স্বাক্ষর পরীক্ষা করা হয়। এ পদ্ধতিতে স্বাক্ষরের আকার, লেখার গতি, লেখার সময় এবং কলমের চাপ পরীক্ষা করে ব্যবহারকারীর স্বাক্ষর শনাক্ত করা হয়। একটি স্বাক্ষরের সব প্যারামিটার ডুপ্লিকেট করা সম্ভব নয়। এ পদ্ধতিতে ব্যবহার করা হয় বিশেষ ধরনের একটি কলম এবং প্যাড বা ট্যাবলেট পিসি।
সুবিধা :
১। এটি একটি সর্বস্তরের গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি।
২। এ পদ্ধতি ব্যবহারে খরচ কম।
৩। শনাক্তকরণে কম সময় লাগে।
অসুবিধা :
১। যারা স্বাক্ষর জানে না তাদের জন্য এ পদ্ধতি ব্যবহার করা যায় না।
ব্যবহার :
১। ব্যাংক-বীমা এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে স্বাক্ষর শনাক্তকরণের কাজে এ পদ্ধতি ব্যবহার হয়ে থাকে।
বায়োমেট্রিকস ব্যবহারের ক্ষেত্রগুলো—
১। প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ।
২। অফিসের সময় ও উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণ।
৩। পাসপোর্ট তৈরি।
৪। ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি।
৫। ব্যাংকের লেনদেনে নিরাপত্তা।
৬। এটিএম বুথের নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ।
৭। আবাসিক নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ।
৮। কম্পিউটার ডাটাবেইস নিয়ন্ত্রণ।
0 Comments
Thank you for your comment.