Ticker

6/recent/ticker-posts

জীববিজ্ঞান প্রথম পত্র - গলজি বস্তু ও লাইসোজোম ( অনলাইন ক্লাস- ৩ )

গলজি বস্তু

1.  থিয়োরি রঙ্গ

2.  (M.C.Q) রঙ্গ



সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত কতকগুলো ঘনসন্নিবিষ্ট চওড়া সিস্টারনি,থলির মতো ভ্যাকুওল এবং ক্ষুদ্র ভেসিকল এর সমন্বয়ে গঠিত জটিল অঙ্গাণু হল গলগি বস্তু বা গলজি বস্তু(ইংরেজিঃ Golgi Body)।স্নায়ুবিজ্ঞানী ক্যামিলো গলজি ১৮৯৮ সালে পেঁচা বিড়ালের মস্তিষ্কের কোষে গলজি বস্তু আবিষ্কার করেন।গলজি বস্তুকে কোষের প্যাকেজিং কেন্দ্র বলে। গলজি বস্তু প্রধানত প্রাণিকোষে পাওয়া যায়। তবে উদ্ভিদকোষেও কদাচিৎ দেখা যায়। ইতালীয় স্নায়ুতত্ত্ববিদ ক্যামিলো গলগি ১৮৯৮ সালে গলগি বডি আবিষ্কার করেন। তার নাম অনুসারেই গলগি বডির নামকরণ করা হয়।

কোষের ট্রাফিক পুলিশ

গলগি বডি কোষের কেন্দ্রীয় অংশ থেকে ঝিল্লিবদ্ধ বস্তু বা ভেসিকল কোষের পরিধির দিকে প্লাজমামেমব্রেন পর্যন্ত নিয়ে যায়। আবার গলগি বডি নিঃসৃত পদার্থের সংগ্রহ পরিবহনের ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখে। তাই গলগি বডিকেকোষের ট্রাফিক পুলিশবলে।

বিস্তৃতি

প্রোক্যারিওটিক কোষে এবং কিছু ছত্রাক,ব্রায়োফাইট টেরিডোফাইটের শুক্রাণু,পরিণত সীভনল এবং প্রাণীর লোহিত রক্তকণিকায় গলজি বস্তু অনুপস্থিত।উদ্ভিদকোষে সাইটোপ্লাজম ছড়ানো থাকে,কিন্তু প্রাণিকোষে এগুলো সাধারণত নিউক্লিয়াসের কাছাকাছি স্তরীভূত অবস্থায় থাকে বা নিউক্লিয়াসকে ঘিরে রাখে। কখনও বা জালিকার মতো বিন্যস্ত থাকে।

গঠন:

কোষের শারীরবৃত্তিক কাজের ভিত্তিতে গলজি বস্তুর গঠনে ভিন্নতা দেখা যায়। Dalton,Felix প্রভৃতি বিজ্ঞানীর মতে গলজি বস্তুতে ঝিল্লিময় চারটি উপাদান থাকে,যথা- সিস্টারনি,ভ্যাকুওল,ভেসিকল পালিকা বা টিউবিউল

গলগিবডির আকৃতি(M.C.Q)

আকৃতিগত ভাবে এরা লম্বা চ্যাপ্টা থলির মত। এদের আয়তন তিন রকমের হয় ৬০- ৭০ Å ব্যাস যুক্ত চ্যাপ্টা থলি, অতিক্ষুদ্র গোলাকার ৩০-৪০Å ব্যাস যুক্ত ভেসিকল, এবং ৬০-২০০Å ব্যাস যুক্ত বড় গহবর।

ল্যামিলি বা সিস্টার্নি বা চ্যাপ্টা থলি

এগুলো একক আবরণী দিয়ে বেষ্টিত, লম্বা, চ্যাপ্টা সরু নালিকা। এরা পরপর (-২০ সংখ্যায়) সমান্তরালভাবে অবস্থান করে। এদের আবরনীতে কোন রাইবোজোম দানা দেখা যায় না। এদের সহজেই অস্মিয়াম টেট্রাক্সাইড দিয়ে রঞ্জিত করা যায়। আবরণী ৬০-৭০Å চওড়া হয় এবং আবরণী মধ্যকার নালিকা ৬০-৯০Å চওড়া হয়। ল্যামিলির প্রতিটি থলির মধ্যে ব্যবধান ২০০-৩০০Åথাকে। এরা এক সঙ্গে অনেকটা বাঁকানো অবস্থায় থাকে। এদের উত্তর দিক ER এর দিকে থাকে, একে সৃষ্টির তল বলে। ল্যামিলির অবতল দিকটি ER এর বিপরীতে থাকে, একে পরিণত তল বলে। পরিণত তল থেকে ভিসিকল এবং ভ্যাকুওল গুলি তৈরি হয়। এদের ভিতর ক্ষরিত দ্রব্য থাকে।


মাইক্রো ভেসিকেল

এরা অতি ক্ষুদ্র (৩০-৪০Å)গোলাকার অঙ্গাণু এককভাবে বা দলবদ্ধভাবে থাকে।

ভ্যাকুওল বা গহবর

এরা বড় গহবর বিশেষ এবং গলগী সিস্টার্নির কাছাকাছি থাকে। গলগি বডির কাছাকাছি সাইটোপ্লাজমীয় অংশে অন্য কোন অঙ্গানু থাকে না তাই এই অঞ্চলকে জন অফ এক্সক্লুশন বলে।

 

রাসায়নিক উপাদান

গলজি বস্তুর ঝিল্লি লিপোপ্রোটিন নির্মিত।লিপিডের মধ্যে রয়েছে প্রধানত লেসিথিন  সেফালিন জাতীয় ফসফোলিপিডক্যারোটিনয়েড ,ফ্যাটি এসিড,ভিটামিন-সি প্রভৃতিও রয়েছে।গলজি বস্তু এনজাইমে পরিপূর্ণ।গুরুত্বপূর্ণ এনজাইমগুলো হচ্ছে- ADPase,Mg++,ATPase,CTPase,TTPase,সামান্য পরিমাণে গ্লুকোজ--ফসফেট

কাজ

. লাইসোজোম তৈরি করা।

. অপ্রোটিন জাতীয় পদার্থের সংশ্লেষণ করা।

. কিছু এনজাইম নির্গমন করা।

. কোষ বিভাজন কালে কোষ্পলেট তৈরি করা।

. প্রোটিন, হেমিসেলুলোজ, মাইক্রফ্রাইব্রিল তৈরি করা।

. কোষস্থ পানি বের করা

. এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম প্রস্তুতকৃত দ্রব্যাদি ঝিল্লিবদ্ধ করা।

. বিভিন্ন পলিস্যাকারাইড সংশ্লেষণ পরিবহনে অংশ গ্রহণ করা।

. মাইটোকন্ড্রিয়াকে ATP উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করে।

১০. আক্রসম তৈরি।

 

পদ্ধতিঃ প্রথমে মসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামে উৎপন্ন ট্রানজিশন ভেসিকল দ্বারা আবৃত রাইবোসোম/প্রোটিন গলগি বডির সিজ সিস্টার্নায় প্রবেশ করে সেখানে উন্মুক্ত হয়। পরবর্তীতে,সেখানে ঝিল্লিবদ্ধ হয়ে(প্রোটিন/রাইবোজোম)ট্রান্স সিস্টার্নার ভেতর দিয়ে সিক্রেটরি ভেসিকলের মাধ্যমে গলগি বডি থেকে বের হয় এবং নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে।

 

TGN=(Trans-Golgi Network):অনিয়মিত(ভিন্ন ধরনের) আকৃতির সিস্টার্না এবং ভেসিকলসমূহ।

লাইসোজোম



লাইসোসোম বা লাইসোজোম (ইংরেজি:Lysosome) এক ধরনের কোষীয় অঙ্গাণু যা সাধারণত প্রাণী কোষে পাওয়া যায়।কোষের সাইটোপ্লাজমে দ্বি-স্তর বিশিষ্ট লিপো-প্রোটিন সম্বনয়ে গঠিত মেমব্রন বা ঝিল্লি দ্বারা আবৃত যে অঙ্গাণুটি নানাবিধ হাইড্রোলাইটিক এনজাইমের ধারক বা বাহক হিসেবে কাজ করে তাই লাইসোজোম বলে।এতে বিদ্যমান ভেসিকলগুলো হাইড্রোলাইটিক এনজাইম এর আধার হিসেবে কাজ করে। একে "আত্মঘাতী থলিকা" বা "আত্মঘাতী স্কোয়াড" বলা হয়।

আবিষ্কার

নোবেল জয়ী বিজ্ঞানী ক্রিশ্চিয়ান দ্য দুভ ১৯৫৫ সালে লাইসোসোম আবিষ্কার নামকরণ করেন।

বেলজিয়ামের ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অফ লুভ এর অধ্যাপক ক্রিশ্চিয়ান দে দুভ এবং তার দল ১৯৪৯ সালে যকৃতে ইনসুলিনের ক্রিয়া-কৌশল নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছিলেন। এসময় তারা শর্করা বিপাকের (গ্লাইকোলাইসিস) ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ এনজাইম এবং ইনসুলিনের লক্ষ্যবস্তু গ্লুকোজ -ফসফাটেজ (G6P) এনজাইমের ওপর লক্ষ্য রেখেছিলেন। তারা দেখতে পেলেন যে, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের প্রধান এনজাইম হল G6P কিন্তু বারবার পরীক্ষার পরও তারা কোষীয় নির্যাস থেকে এনজাইমটি আলাদা করতে পারেন নি। তাই এনজাইমটি আলাদা করতে তারা আরও cell fractionation পদ্ধতি অবলম্বন করেন।

এনজাইমটি সণাক্ত করতে তারা অ্যাসিড ফসফাটেজ ব্যবহার করে একটি পদ্ধতি অবলম্বন করেন। কিন্তু এর ফলাফল ছিল অপ্রত্যাশিতভাবে খুবই কম; প্রত্যাশিত মানের ১০% এর কাছাকাছি। এরপর একদিন তারা দিন ধরে সংরক্ষিত কিছু বিশুদ্ধ কোষ ভগ্নাংশের ক্রিয়াকলাপ পরিমাপ করেন। তারা লক্ষ্য করেন, এনজাইমের ক্রিয়া বৃদ্ধি পেয়ে আবার নতুন নমুনাসমূহের মাত্রায় উন্নীত হয়েছে। পরীক্ষাটি বারবার করেও একই রকম ফলাফল পাওয়া যায়। কারণে প্রস্তাব করা হয় যে, কোন একটি প্রতিবন্ধকতার জন্য ভিত্তিস্তরে এনজাইমের দ্রুত প্রবেশ সীমাবদ্ধ থাকে। ফলে একটি নির্দিষ্ট সময় পার হবার পরই কেবল এনজাইমগুলোর ব্যাপন ঘটে। তারা এই প্রতিবন্ধকতাকেঝিল্লি দ্বারা পরিবেষ্টিত অ্যাসিড ফসফাটেজ ধারণকারী একটি থলের ন্যায় কাঠামো ”- বলে আখ্যা দেন।

ঝিল্লিযুক্ত ভগ্নাংশ, যেগুলো কোষীয় অঙ্গাণু বলে পরিচিত, সেখান থেকে একটি সম্পর্কহীন এনজাইম cell fractionation প্রক্রিয়ার সাথে পাওয়া যায়। এদের পরিপাকীয় বৈশিষ্ট্যের সাথে মিল রেখে, ১৯৫৫ সালে দে দুভ এদের নাম দেনলাইসোসোম

ভারমন্ট বিশ্ববিদ্যালয় এর অ্যালেক্স বি. নভিকফ সেই বছরই দে দুভ এর গবেষণাগার পরিদর্শনে যান এবং ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করে সফলভাবে লাইসোসোম অঙ্গাণুটির প্রথম দৃশ্যমান প্রমাণ সংগ্রহ করেন। এছাড়া অ্যাসিড ফসফাটেজের জন্য একটি রঞ্জক পদ্ধতি ব্যবহার করে, দে দুভ নভিকফ লাইসোসোমের পানিগ্রাহী এনজাইমের অবস্থান নিশ্চিত করেন।

অ্যালেক্স বি. নভিকফ ১৯৬০ সালে এদের আণুবীক্ষণিক গঠন বর্ণনা করেন। ১৯৬০ সালে Matile এটি নিউরোস্পোরা ছত্রাকে পর্যবেক্ষণ করেন।

অবস্থান

লোহিত রক্তকণিকা ব্যতীত প্রায় সব প্রাণীকোষেই লাইসোসোম থাকে। শ্বেত রক্তকণিকায় অধিক পরিমাণে লাইসোসোম পাওয়া যায়। এছাড়া যকৃত কোষবৃক্ক কোষ  অন্ত্রের আবরণী কোষে লাইসোসোম বেশি থাকে।

এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম থেকে এদের উৎপত্তি এবং গলজি বডি কর্তৃক প্যাকেজকৃত।

ভৌত গঠন

লাইসোসোম দ্বি-স্তর বিশিষ্ট লিপোপ্রোটিন আবরণী দ্বারা আবদ্ধ থাকে। ভ্যাকুওল ঘন তরলপূর্ণ  এসিডিক হয়। লাইসোসোম সাধারণত বৃত্তকার। এর ব্যাস সাধারণত . থেকে . মাইক্রোমিলি এর মধ্যে হয়। তবে এদের আকার ছোট-বড় হতে পারে। যেমনবৃক্ক কোষের লাইসোসোম অপেক্ষাকৃত বড় হয়। এমন কি বড় লাইসোসোম এর আকার ছোটগুলোর চেয়ে ১০ গুণেরও বেশি বড় হতে পারে।

রাসায়নিক গঠন

লাইসোসোমে ৬০ টিরও বেশি এনজাইম এবং ঝিল্লিতে ৫০টিরও বেশি ধরনের মেমব্রেন প্রোটিন পাওয়া গেছে।এ এনজাইমগুলো অমসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম  সংশ্লেষিত হয়। প্রধান এনজাইমগুলো হল:

·         DNAase

·         RNAase

·         লাইসোজাইম

·         এস্টারেজ

·         স্যাকারেজ

·         এসিড লাইপেজ

·         অ্যারাইল সালফোটেজ

·         ফসফোলাইপেজ

·         ফসফোটেজ এস্টারেজ

·         গ্যালাকটোসাইডেজ

·         গ্লুকোসাইডেজ

·         ডেক্সট্রোনেজ

Post a Comment

0 Comments