নগ্নবীজী উদ্ভিদ:
যে সকল উদ্ভিদের ফুল ও বীজ হয় কিন্তু ফুলে গর্ভাশয় নেই বলে ফল উৎপন্ন হয়না বিধায় বীজ নগ্ন অবস্থায় থাকে তাদের নগ্নবীজী বা ব্যক্তবীজী উদ্ভিদ (Gymnosperm) বলে। নগ্নবীজী উদ্ভিদ সজীব উদ্ভিদগুলোর মধ্যে প্রাচীন। গ্রিক শব্দ Gymnos = নগ্ন ও spermos = বীজ থেকে Gymnospermae শব্দটি উদ্ভূত হয়েছে।
নগ্নবীজী
উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যঃ
১. উদ্ভিদ বহুবর্ষজীবী।
২. এরা চিরসবুজ।
৩. মাইক্রোস্পোর ও মেগাস্পোর (পুং ও স্ত্রী লিঙ্গধর উদ্ভিদ) তৈরি করে অর্থাৎ এরা স্পোরোফাইট অসমরেণুপ্রসূ।
৪. এদের রেণুপত্র অর্থাৎ স্পোরোফিলগুলো ঘনভাবে সন্নিবেশিত হয় এবং স্ট্রোবিলাস বা কোন তৈরি করে।
৫. মেগাস্পোরোফিল-এ অর্থাৎ স্ত্রীরেণুপত্রে কোনো গর্ভাশয় তৈরি হয় না। তাই এদের গর্ভাশয়, গর্ভদন্ড ও গর্ভমুন্ড নেই। এ কারণে পরাগায়নের সময় পরাগরেণু সরাসরি ডিম্বক রন্ধ্রে পতিত হয়।
৬. ডিম্বক থাকে মেগাস্পোরোফিলের কিনারায় নগ্ন অবস্থায়।
৭. গর্ভাশয় না থাকায় কোনো ফল সৃষ্টি হয়না।
৮. ফল সৃষ্টি হয় না বিধায় বীজ/নিষিক্ত ডিম্বক নগ্ন অবস্থায় থাকে।
৯. নগ্নবীজী উদ্ভিদে দ্বিনিষেক ঘটে না তাই শাঁস হ্যাপ্লয়েড এবং নিষেকের পূর্বে সৃষ্টি হয়। তবে ব্যতিক্রম Ephedra।
১০. Gnetum ব্যতীত অন্যান্য উদ্ভিদের জাইলেম টিস্যুতে সত্যিকার ভেসেল কোষ থাকে না। এছাড়া ফ্লোয়েম টিস্যুতে সঙ্গীকোষ থাকে না।
১১. এরা সকলেই বায়ু পরাগী।
১২. এদের জীবনচক্রে অসম আকৃতির অর্থাৎ heteromorphic জনুক্রম বিদ্যমান।
১৩. সাধারণত এদের আর্কিগোনিয়া সৃষ্টি হয়।
cycas
cycas এর বৈশিষ্ট্য
১. cycas উদ্ভিদ স্পোরোফাইট।
২. দেহ মুল কান্ড পাতায় বিভক্ত
৩. পাতায় ট্রান্সপিউশন টিস্যু বিদ্যমান
৪. বাতাসের দ্বারা পরাগায়ন ঘটে
৫. হেটারোস্পোরিক
৬. সাইকাস এর শুক্রানু উদ্ভিদ কুলে ব্হৎ, লািটম এর মতো,সচল ও বহু ফ্ল্যাজেলা রয়েছে।
৭. বীজ উৎপন্ন হয় কিন্তু ফল হয় না।
৮. উদ্ভিদ খাড়া পাম জাতীয়, বীজ উৎপন্ন হয় কিন্তু ফল উৎপন্ন হয় না।
৯.
পাতা
বৃহৎ,
পক্ষল
যৌগিক,
কান্ডের
মাথার
দিকে
সর্পিলাকারে
সজ্জিত।
১০.
কচি
পাতার
ভার্নেশন
সারসিনেট
(কুন্ডলিত)।
১১.
কোরালয়েড
গৌণ
মূল
থাকে।
১২.
পুংরেণুপত্র
স্ট্রোবিলাস
তৈরি
করে
কিন্তু
স্ত্রীরেণুপত্র
স্ট্রোবিলাস
তৈরি
করে
না।
গঠন:
Cycas এর দেহ স্পোরোফাইট। স্পোরোফাইট মূল, কান্ড ও পাতায় বিভেদিত। কান্ড অশাখ (Caudex), খাড়া, বেলনাকার
(Cylindrical), কাষ্ঠল, অনেকটা খেজুর গাছের ন্যায়। কান্ড পত্রমূল দিয়ে আচ্ছাদিত এবং অমসৃণ। পাতা কান্ডের অগ্রভাগে মুকুটের ন্যায় অবস্থান করে। প্রতিটি পাতা পক্ষল ও যৌগ। কান্ডের মাথায় যৌগপত্রগুলো সর্পিলাকারে সজ্জিত থাকে। কচি পাতা ফার্ণের মত কুন্ডলিত মুকুল পত্রবিন্যাসযুক্ত
(Circinate vernation)। কচি পাতার গায়ে বাদামী বর্ণের শল্কপত্র দেখা যায়। পত্রখন্ড চর্মবৎ ও সবুজ বর্ণের। পত্রখন্ডে একটি মাত্র মধ্যশিরা থাকে, কোন প্রকার শিরা বা উপ-শিরা স্পষ্ট নয়। Cycas এর প্রধান মূল থাকে। প্রধান মূল থেকে ছোট ছোট শাখামূল বের হয়। এগুলো মাটির কাছাকাছি এসে দ্ব্যাগ্র শাখান্বিত ও ঘন সনিড়ববিষ্ট হয়। এদরকে কোরালয়েড মূল (Coralloid root) বলে। প্রকৃতপক্ষে শাখামূল Nostoc নামের নীলাভ সবুজ শৈবাল অথবা ব্যাকটেরিয়া দিয়ে আক্রান্ত হয়ে কোরাল বা প্রবাল আকার ধারণ করে বলে কোরালয়েড মূল বলা হয়।
জীবন্ত জীবাশ্ম:
বর্তমান কালের কোন জীবিত উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য অতীত কালের কোন জীবাশ্ম উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যের সাথে মিল সম্পন্ন হলে তাকে জীবন্ত জীবাশ্ম বলা হয়।
Cycas কে জীবন্ত জীবাশ্ম বলার কারণ:
এটি Cycadales বর্গের অন্তর্গত একটি উদ্ভিদ। প্রাথমিক মেসোজোয়িক যুগে Cycadales বর্গের অনেক উদ্ভিদ পৃথিবীব্যাপি বিস্তৃত ছিল। এদের অনেকেই এখন বিলুপ্ত। এদের পাওয়া যায় জীবাশ্ম হিসেবে। এ বর্গের Cycas সহ ৯টি গণের প্রায় ১০০টি প্রজাতি এখনও পৃথিবীর বুকে টিকে রয়েছে। এদের অনেক বৈশিষ্ট্য আদি কালের বিলুপ্ত জীবাশ্ম ইকাড্স এর বৈশিষ্ট্যের অনুরূপ এবং আদি প্রকৃতির। এজন্যই Cycas সহ বর্তমানকালের সকল সাইকাড্সকে জীবন্ত জীবাশ্ম বলা হয়। Cycadales বর্গের সদস্যদেরকে সাইকাড্স বলে।
Poaceae গোত্র
স্বরূপ: বর্ষজীবী বা বহুবর্ষজীবী বীরুৎ, কতক বৃক্ষবৎ, যেমন বাঁশ।
মূল: গুচ্ছ মূল।
কাণ্ড: নলাকার, অধিকাংশ গণে মধ্যপর্ব ফাঁপা (এ ধরনের কান্ডকে সাধারণত Culm বলা হয়)। আখ এবং ভূট্টা গনদ্বয়ে কান্ড তেমন ফাঁপা থাকে না।
পাতা: সরল, একান্তর, লিগিউলবিশিষ্ট।
পুষ্পবিন্যাস: স্পাইকলেট।
পুষ্প: ঘাস গোত্রের পুষ্পকে সাধারণত পুষ্পিকা বলা হয়। এরা উভলিঙ্গ বা একলিঙ্গ হতে পারে। ভিন্নবাসী বা সহবাসী হতে পারে।
পুষ্পপুট: সকল পুষ্পিকাতে পুষ্পপুট নেই। কোন কোন উদ্ভিদের পুষ্পিকাতে ক্ষুদ্রাকায় পুষ্পপুট থাকে যাকে লোডিকিউল বলে। ক্ষুদ্র শল্কপত্রের ন্যায় পুষ্পপুট হলো লোডিকিউল
(Lodicule)।
পুংস্তবক: পুংকেশর সাধারণত ৩টি, ধান ও বাঁশ উদ্ভিদের পুষ্পে ৬টি পুংকেশর দুই আবর্তে অবস্থিত। পরাগধানী রেখাকার, সর্বমুখ, লম্বালম্বি বিদীর্ণ হয়।
স্ত্রীস্তবক: গর্ভপত্র ১টি, গর্ভাশয় ১টি, গর্ভদন্ড ১টি, গর্ভমুন্ড ২টি, পালকের ন্যায় এবং পার্শ্বীয়, গর্ভাশয় এক প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট, প্রকোষ্ঠে ডিম্বক ১টি, ডিম্বক খাড়া এবং মূলজ।
অমরাবিন্যাস: মূলীয়।
ফল: ক্যারিওপসিস।
বীজ: সস্যল।
পুষ্প সংকেত: মপ. উমপ. পুং২পু(৩+৩)গ১
Poaceae গোত্রের শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য
১। কান্ড সাধারণত নলাকার, মধ্যপর্ব ফাঁপা।
২। পাতা লিগিউলবিশিষ্ট।
৩। পুষ্পবিন্যাস স্পাইকলেট।
৪। পরাগধানী সর্বমুখ।
৫। গর্ভমুন্ড পালকের ন্যায়।
৬। ফল ক্যারিওপসিস।
মালভেসি (Malvaceae) গোত্র
স্বরূপ: বীরুৎ, গুল্ম বা বৃক্ষ। উদ্ভিদ মিউসিলেজ বা পিচ্ছিল পদার্থ যুক্ত।
মূল: প্রধান মূলতন্ত্র।
কান্ড: নরম, শক্ত বা কাষ্ঠল, শাখান্বিত।
পাতা: সরল, বড়, চওড়া, জালিকা শিরাবিন্যাসযুক্ত, সবৃন্তক, উপ-পত্র যুক্ত। উপ-পত্র মুক্ত পার্শ্বীয়, কিনারা অখন্ডিত বা খন্ডিত।
পুষ্প বিন্যাস: একক (সাইমোস)।
পুষ্প: একক, সম্পূর্ণ, সমাঙ্গ, উভলিঙ্গ, অধিগর্ভ বা গর্ভপাদপুষ্পী।
উপবৃতি: উপ-বৃত্যংশ ৩-১০টি, মুক্ত বা যুক্ত (Sida ও
Abutilon) গণে উপ-বৃতি নাই)।
বৃতি: বৃত্যংশ ৫টি যুক্ত বা মুক্ত, ভালভেট বা প্রান্তস্পর্শী।
দল: পাপড়ি ৫টি, মুক্ত বা পুংকেশরীয় নলের সাথে গোড়ায় যুক্ত, টুইষ্টেড বা পাকানো, মিউসিলেজ বা পিচ্ছিল পদার্থযুক্ত।
পুংস্তবক: পুংকেশর অসংখ্য, একগুচ্ছক, পুংদন্ড সংযুক্ত হয়ে একটি নলের সৃষ্টি করে, দললগ্ন, পরাগধানী এক প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট, বৃক্কাকার
(kidney shaped), রেণু বৃহৎ, কণ্টকিত।
স্ত্রীস্তবক: গর্ভপত্র ১-২০ এর বেশি, সাধারণত ৫-১০টি, যুক্ত, গর্ভাশয় অধিগর্ভ, ১-বহু প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট, সাধারণত ৫ প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট, অমরাবিন্যাস অক্ষীয়, গর্ভদন্ড গর্ভপত্রের সমান সংখ্যক, গর্ভমুন্ড গর্ভদন্ডের সংখ্যার সমান অথবা দ্বিগুণ।
ফল: ক্যাপসুল, বেরি অথবা সাইজোকার্প।
বীজ: সাধারণত সস্যল, সস্য তেলযুক্ত।
Malvaceae (মালভেসি) গোত্রের শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য
১। উদ্ভিদ মিউসিলেজ যুক্ত।
২। উপপত্র মুক্ত পার্শ্বীয়।
৩। পুষ্প সাধারণত উপ-বৃতিযুক্ত ও মিউসিলেজ যুক্ত।
৪। পুংকেশর অনেক, একগুচ্ছক, পুংদন্ড একত্রে যুক্ত হয়ে পুংকেশরীয় নালিকা তৈরি করে।
৫। গর্ভাশয় ও গর্ভদন্ড পুংকেশরীয় নালিকা দিয়ে বেষ্টিত।
৬। পরাগধানী বৃক্কাকার ও এক প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট।
৭। পরাগরেণু বৃহৎ ও কণ্টকিত।
পরীক্ষার নাম: Malvaceae
গোত্র পর্যবেক্ষণ।
উপকরণ: একটি ডালসহ জবা ফুল, ব্লেড, নিডল, চিমটা ইত্যাদি।
কার্যপদ্ধতি: একটি জবা ফুল নিয়ে তার বিভিন্ন অংশ সূ²ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এরপর সাবধানে ব্লেড দিয়ে ফুলটির লম্বচ্ছেদ করে অমরাবিন্যাস শনাক্ত করতে হবে।
পর্যবেক্ষণ: পর্যবেক্ষণে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো দেখা যাবে-
১। উদ্ভিদের কচি অংশ পিচ্ছিল মিউসিলেজযুক্ত।
২। পুংকেশর অসংখ্য, একগুচ্ছ এবং পুংদন্ডগুলো মিলিত হয়ে একটি ফাঁপা পুংকেশরীয় নালিকা সৃষ্টি করে।
৩। মুক্তপার্শ্বীয় উপ-পত্র বিদ্যমান।
৪। উপবৃতি বিদ্যমান।
৫। দলমন্ডল পাকানো।
৬। পরাগধানী একপ্রকোষ্ঠবিশিষ্ট এবং বৃক্কাকার।
৭। পরাগরেণু বড় ও কণ্টকিত।
৮। অমরাবিন্যাস অক্ষীয়।
আবৃতবীজী উদ্ভিদ
আবৃতবীজী উদ্ভিদ:
যে সকল উদ্ভিদের ফুল, ফল ও বীজ উৎপন্ন হয় এবং ফলের বীজ নির্দিষ্ট আবরণ দিয়ে আবৃত অবস্থায় থাকে তাকে আবৃতবীজী উদ্ভিদ (Angiosperm) বলে। আজ থেকে প্রায় ১২০ মিলিয়ন বছর পূর্বে
Cretaceous যুগের প্রথম দিকে আবৃতবীজী উদ্ভিদের উদ্ভব হয়েছিল বলে ধরে নেয়া হয়। Cretaceous যুগের শেষের দিকেই (আজ থেকে ৮০ মিলিয়ন বছর পূর্বে) পৃথিবীর অধিকাংশ অঞ্চলে আবৃতবীজী উদ্ভিদ প্রাধান্য বিস্তার লাভ করে ফেলে। বর্তমানে আবৃতবীজী উদ্ভিদ প্রজাতির সংখ্যা প্রায় আড়াই লক্ষ ধারণা করা হয়। এরা পানিতে, সিক্ত মাটিতে, মরুভূমিতে, পাথুরে পাহাড়ি অঞ্চলে, এমনকি পরাশ্রয়ী ও পরভোজী হিসেবে অন্য উদ্ভিদের উপর জন্মায়।
আবৃতবীজী উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যঃ
১। এরা পুষ্পক উদ্ভিদ অর্থাৎ এদের ফুল হয়।
২। ফুলের গর্ভাশয় থেকে ফল উৎপন্ন হয়।
৩। বীজ আবৃত অবস্থায় অর্থাৎ ফলের ভেতরে থাকে।
৪। এদের কোন অবস্থায়ই আর্কিগোনিয়া সৃষ্টি হয় না।
৫। এদের দ্বিনিষেক ঘটে।
৬। এদের এন্ডোস্পার্ম (বীজের শাঁস) ট্রিপ্লয়েড, নিষেকের পর তৈরি হয়।
৭। এদের জাইলেম টিস্যুতে ভেসেল থাকে।
৮। এদের ফ্লোয়েম টিস্যুতে সঙ্গীকোষ থাকে।
0 Comments
Thank you for your comment.