ক্রসিং
ওভার কাকে বলেঃ
যে পদ্ধতিতে মিয়োসিস কোষ বিভাজনের প্রোফেজ-I দশার প্যাকিটিন উপদশায় দুটি সমসংস্থ ক্রোমোজোমের ননসিস্টার ক্রোমাটিডের মধ্যে খন্ড বিনিময় হয় এবং ফলস্বরুপ জিনের পুনঃসংযুক্তি ঘটে তাকে ক্রসিং ওভার বলে।
ক্রসিং ওভারের কৌশলঃ
মিয়োসিসের
প্রথম প্রোফেজের জাইগোটিন উপপর্যায়ে হোমোলগাস ক্রোমোজোমের পারস্পরিক আকর্ষণের ফলে পরস্পরের
সান্নিধ্যে এসে জোড় বাঁধে। প্রতি জোড়ার নাম বাইভ্যালেন্ট। প্যাকাইটিন উপধাপে বাইভ্যালেন্টের
প্রত্যেক ক্রোমোজোম সেন্ট্রোমিয়ার ছাড়া লম্বলম্বি বিভক্ত হয়ে দুটি করে সিস্টার ক্রোমাটিড
গঠন করে। এর ফলে প্রতিটি বাইভ্যালেন্ট চারটি করে ক্রোমাটিড সৃষ্টি হয়। বাইভ্যালেন্টের
হোমোলগাস ক্রোমোজোমের মধ্যে বিকর্ষণ শক্তির আবির্ভাব ঘটে এবং পরস্পর থেকে দূরে সরে
যায়। হোমোলগাস ক্রোমোজোম সম্পূর্ণ আলাদা হতে পারে না। কারণ ননসিস্টার ক্রোমাটিডের মাধ্যমে
এরা এক বা একাধিক স্থানে যুক্ত থেকে ইংরেজী “X”
অক্ষরের মতো কায়াজমা সৃষ্টি করে। কায়াজমা অংশে ক্রোমাটিডগুলো এন্ডোনিউক্লিয়েজ
এনজাইমের প্রভাবে ভেঙ্গে যায় এবং সঙ্গে সঙ্গে লাইগেজ নামক এনজাইমের মাধ্যমে জোড়া লেগে
যায়। জোড়া লাগার সময় একটি ক্রোমাটিডের ভাঙ্গা অংশ অন্য ক্রোমাটিডের একই জায়গায় ভাঙ্গা অংশে যুক্ত হয়। এর নাম ক্রসিং ওভার। ক্রসিং
ওভার সম্পন্ন হলে কায়াজমা ক্রমশঃ ক্রোমাটিডের প্রান্তদেশে চলে যায়। ক্রসিং ওভারের ফলে
ক্রোমাটিডের মধ্যে অংশ বিনিময় ঘটার সাথে সাথে জিনেরও বিনিময় ঘটে। জিন বিনিময়ের ফলে
চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বিনিময় হয়, ফলে জীবে চারিত্রিক পরিবর্তন ঘটে।
ক্রসিং
ওভার এর গুরুত্বঃ
১. ক্রসিংওভারের ফলে দুটি ক্রোমাটিডের মধ্যে অংশের বিনিময় ঘটে , ফলে জিনগত পরিবর্তন সাধিত হয় ।
২. জিনগত পরিবর্তন সাধনের ফলে সৃষ্ট জীবে বৈশিষ্ট্যগত পরিবর্তন সাধিত হয় ।
৩. বৈশিষ্ট্যগত পরিবর্তনের মাধ্যমে সৃষ্টিকুলে আসে বৈচিত্র্য , সৃষ্টি হয় নতুন পরিবেশে টিকে থাকার ক্ষমতা , আবার কখনও সৃষ্টি হয় । নতুন প্রজাতি ।
৪. ক্রসিংওভারের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত উন্নত বৈশিষ্ট্য বিশিষ্ট নতুন প্রকরণ সৃষ্টি করা হয় । এভাবেই ফসলী উদ্ভিদের ক্রমাগত উন্নতি সাধন করা হয় ।
৫. কৃত্রিম উপায়ে ক্রসিংওভার ঘটিয়ে বংশগতিতে পরিবর্তন আনা সম্ভব । কাজেই প্রজননবিদ্যায় ক্রসিং ওভারের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে ।
৬. গবেষণার ক্ষেত্রেও ক্রসিংওভারের গুরুত্ব রয়েছে । কারণ—ক্রোমোসোমে জিনের রেখাকার বিন্যাস প্রমাণে বা ক্রোমোসোমে ম্যাপিং - এ ক্রসিংওভার বৈশিষ্ট্য ব্যবহৃত হয় । পরিশেষে বলা যায় যে , জীবের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্যতা আনয়নে ক্রসিং ওভারের গুরুত্ব অপরিসীম ।
৭.ক্রসিং ওভার এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে
জিনগুলি ক্রোমোজোমে সরল রেখায় সজ্জিত থাকে।
৮. একটি জিনের দুটি অ্যালিল হোমোলোগাস
ক্রোমোজোমের একই লোকাসে অবস্থান করে- এই তত্ত্বটিও ক্রসিং ওভার পদ্ধতির মাধ্যমে
প্রমাণিত হয়।
৯. ক্রসিং ওভার পদ্ধতিতে জিনের পুনঃসংযোজন ঘটে
এবং এর ফলে রিকম্বাইন্ড গ্যামেটগুলি মিলিত হয়ে অপত্যের মধ্যে নতুন জিনের প্রকাশ
ঘটে। অর্থাৎ, ক্রসিং ওভার এর জন্যই জনিতৃর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের থেকে অপত্যের
চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পৃথক হয়।
১০. ক্রসিং ওভারের দ্বারা জিনের যে পুনঃসংযুক্তি
ঘটে তা নতুন প্রজাতির সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ।
0 Comments
Thank you for your comment.